বেকারের চিঠি ও কবিতা || বেকারত্বের চিঠি ও কবিতা || Bekarotter chithi by Md. Bisshas Prodhan

 

বেকারের চিঠি ও কবিতা || বেকারত্বের চিঠি ও কবিতা || Bekarotter chithi by Md. Bisshas Prodhan




এক বেকার ছেলের গল্প


আমি একজন বেকার বলতে আমার লজ্জা করেনা। বেকারত্ব শব্দটা আমাকে দিনে কয়েকবার শুনতে হয় তাই আর লজ্জা করেনা রাগ হয়না বরং আমার নামের আগে শব্দটা যুক্ত হয়েছে বেকার মেঘ। 


  খাবার টেবিলে বসলে বাবা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করে "কিরে বাবা কিছু হলো তোর? ওমুকের ছেলের তো হয়, অমুকের ছেলেতো ভালোই কাজ করে মাসে মাসে টাকা পাঠাই তুই কেন পারিস না। সবার যদি হয় তোর কেন হয়না"


আম্মা কথাগুলো শুনে শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না আড়াল করে, আম্মা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, আম্মার মলিন ক্লান্ত মুখের ভাষা আমি বুঝি। 


ছোটোবোন লতার পরিক্ষার ফি কোচিং এর বেতন বোন আমার লজ্জায় বলতে পারেনা ওর মুখটা দেখি শুকনা হয়ে থাকে। চুপচাপ পড়ে আর সময় পেলে হাতের কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করে।


একটা টিউশনি ছিলো আমার, বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। অঢেল টাকাপয়সা থাকলেও আমার ছাত্রী তেমন ভালো পড়ালেখা করতো না সারাক্ষণ ফোন আর বন্ধু নিয়ে ব্যস্ত। অনেক বুঝিয়েও আমি পড়ালেখা শেখাতে পারছিলাম না। ছাত্রীর রেজাল্ট খারাপ হবার পর ছাত্রীর বাবা মুখের উপর বলেই দিছিলো "মাসের পর মাস টাকা দিই কই কিছুই তো হচ্ছেনা, তোমাকে আর কষ্ট করে আসতে হবেনা বাবা" 



বেকারত্ব কাকে বলে গল্পটি পড়ুন


বন্ধুমহলে এখন আর কোথাও ট্যুরে যাবার কথা উঠলে আমাকে ডাকা হয়না। কারও বার্থডে স্পেশাল আয়োজনে আমার খোঁজ হয়না। অনেক বন্ধু ডাকলেও উত্তর দেয়না পাশ কাটিয়ে চলে যায়। অনেকে আবার আমার নাম্বার ব্লাকলিস্টে রেখে দিয়েছে "যদি টাকা কর্জ চেয়ে বসি" 


 আমার একটা প্রেমিকা ছিলো, ভালোই বড়লোক বাবার মেয়ে। আমার সরলতা দেখে না'কি প্রেমে পড়েছিলো। মেয়েটা বিয়ের স্বপ্ন দেখতো আর আমি তাতে হ্যাঁ হু বলতাম। কারণ আমি তো জানি এর পরিণাম কী। পাশাপাশি বসে মেয়েটা নানান গল্প শোনাতো রূপকথার গল্প,  আমার একটা জব হবে, সেই টাকা জমিয়ে বিয়ের কেনাকাটা হবে, আমাদের বিছানার চাদর কেমন হবে। জানালার পর্দার রং কী হবে। অথবা আমাদের মেয়েকে কোন স্কুলে পড়ালে ভালো হয়। আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন গুলো দেখতাম, ছুঁয়ে দেখার সাহস হতোনা আমার কারণ আমি তো বেকার.. 


রেস্টুরেন্টে মেয়েটা দেখা করতে বলতো না, দেখা করার সময় দামী গিফট দিতেও বলতো না। কেবল সে আমার কাছে সময় চাইতো আকাশ সমান সময়, আমরা পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতাম, আমরা কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতাম। আমরা সূর্যাস্ত দেখে মুগ্ধ হতাম।


এক বর্ষার বিকালে মেয়েটা আমাকে ডেকে বলেই দেয়, এভাবে হচ্ছেনা মেঘ। কোন পরিচয়ে বাবার সামনে তোমাকে দাঁড় করাবো বলতে পারবা? 



বেকার ছেলের ভালোবাসার গল্প


আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, পরিচয় দিতেই কী একটা চাকুরিই সব? 


মেয়েটা কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে বললো, চাকুরি সব কি'না জানিনা তবে বাবার সামনে যেতে হলে তোমাকে চাকুরি পেতেই হবে। 


আমি তার কাছাকাছি এগিয়ে বললাম, আমিতো চাকুরি খুঁজছি না পেলে আমি কি করব বলো? 


মেয়েটা রেগে বলেই উঠলো, কী খুঁজছো এই তার নমুনা। শোনো তোমাকে দিয়ে না কিচ্ছু হবেনা। তাই আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ হওয়া দরকার।


কাছাকাছি যেয়ে বললাম, তাহলে কমিটমেন্ট টা? 


মেয়েটা এক রাশ বিরক্তি আর তুচ্ছতা  মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বললো, যেখানেই থাকার প্রশ্ন উঠেইনা সেখানে আবার কমিটমেন্ট কী? যদি চাকুরি পেতে পারো তখন দেখা যাবে তাছাড়া বাবা আমার জন্য পাত্র দেখছে... 


করুণ ক্লান্ত মুখে মিথ্যে হাসি ঠোঁটের কোণে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলেছিলাম "ভালো থেকো সুনয়না" 


তারপর আবার আকাশ দেখি, চাঁদ দেখি রাতের অন্ধকার গায়ে মাখি, বাবা খাবার টেবিলে কথা শোনায়। অপয়্যা বলে রাগ দেখিয়ে আমার সাথে খায় না। বন্ধুরা আমাকে চেনেনা। মানিব্যাগে তাকিয়ে দেখি শূন্যতার হাহাকার। ছোটোবোন অভিমানে আমার সামনে আসেনা। আম্মা কেবল আচঁলে মুখ লুকিয়ে কষ্টকে আড়াল করে। 



বেকারের চিঠি


  আমার আর লজ্জা করেনা। বেকার বলে আমার কিছুতেই গায়ে লাগেনা। কেউ আমাকে বেকার বললেও আমি সেসবে কান দেইনা। কারণ আমি জানি, আমি চাইলেও কিছু করতে পারবোনা। আমার করার মতোন কিছুই নেই। 


এই যগতে কিছু মানুষ আসলে খারাপ ভাগ্য নিয়ে জন্মায় যারা কিছুই করে উঠতে পারেনা। যাদের কাছে জীবনের মানে বলে কিছুই থাকেনা। কেউ পাঁচ কথা বলে গেলে অপমান করে গেলে খুব প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে কিছুই মনে হয় না। 


তাদের কাছে অন্ধকার খুব প্রিয়, যেমন আমার কাছে অন্ধকার আমাবস্যা প্রিয় আমি মাঝেমাঝে আমাবস্যার রাতে মুখে বালিশ চেপে কান্না করি। দুঃখ ভুলার চেষ্টা করি, কারণ অন্ধকার রাত আমার যতটা প্রিয়, যতটা কাছের অন্যকিছু এতটা বোঝেনা আমাকে। আমাকে বোঝে নিকষকালো অন্ধকার রাত, ঝিঝির ডাক আর দূরে আত্মহননকারী হৃদয় বিদারক ডাহুক পাখি। 


     একটা চিঠি লিখেছি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার চিঠি, জানিনা এ ঘরে আর ফিরবো কি'না, জানিনা এই ঘরের বিছানা মায়ের হাতের খাবার আর বোনের আদুরে মুখটা দেখার সৌভাগ্য হবে কি'না আমার... 



অশ্রু জলে এক বেকারের চিঠি


প্রিয় বাবা, 

 আমার সালাম নিবেন,  আপনি যখন এই চিঠিটা পড়ছেন তখন আমি অনেক দূরে।  বাবা জানেন, আপনি যখন ছোটোবেলা আমার পছন্দের কিছু কিনে দিতে চাইতেন না তখন খুব খারাপ ভাবতাম আপনাকে মনেমনে। রাগ করে আপনার সামনে আসতাম না। তারপর যখন বড় হতে শুরু করলাম আপনাকে বুঝতে শিখলাম তখন আপনি ছিলেন আমার জীবনে একমাত্র উদাহরণ যাকে দেখে আমি শিখতাম। আপনার জীবনে আপনি যা যা করেছেন আমাদের এত বড় করেছেন তার এক বিন্দু আমি আপনাকে প্রতিদান দিতে পারিনি বাবা। 

বাবা আপনি যখন খাবার টেবিলে আপনার বন্ধুর ছেলের চাকুরির কথা বলতেন আর আমার কিছুই হচ্ছেনা শুনে মুখ কালো করতেন তখন টপটপ করে চোখের পানি খাবার প্লেটে পড়তো আমি মুখে ফেলতাম আস্তে করে। 

বাবা, আমি অনেক চেষ্টা করেছি চাকুরির জন্য অফিসের দ্বারেদ্বারে গেছি কেউ আমাকে কোনো চাকুরি দেয়নি সবায় অনেক টাকা চায় বাবা অনেক টাকা; আমার  কাছে তো এত টাকা নেই বাবা। তাই আর আমার চাকুরিটা হয়না। 


বাবা জানেন আমার একমাত্র ছোটোবোন আদরের বোন যাকে আমি ছোটোবেলা থেকে বড় করেছি সে আর আমার সাথে কথা বলেনা। আমার সামনে আসেনা। অভিমানে দূরে দূরে থাকে কারণ ওর ভাই একজন বেকার। 


মায়ের শাড়িটা পুরাতন হয়ে গেছে ছিঁড়েও গেছে আপনি কেনার জন্য যে টাকা দিছিলেন মা সেই টাকা আমাকে দিছিলো চাকুরির পরিক্ষা দিতে যাবার জন্য কিন্তু না বাবা আমার আর চাকুরিটা হয়নি।


বাবা আপনি আমাকে আপয়্যা বলেননা মাঝেমাঝে আসলেই সত্যি বলেন। আমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা। 


বাবা আমার বন্ধুরা আমাকে এখন আর চেনেনা, আমার সাথে কথা বলেনা। আমাকে এড়িয়ে চলে। কারণ আমার মানিব্যাগে টাকা থাকেনা। 


বাবা আমি একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতাম। ভেবেছিলাম চাকুরি টা পেলে বিয়েটা করে নেবো। সেদিন সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বাবা। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন রাতে। ইচ্ছে করছিলো আপনার বুকে মাথা রেখে কাঁদি। কিন্তু আপনি তো আমার মুখ দেখবেন না বলে আমার সাথে খেতে বসেন না। 


বলতে পারবেন বাবা এই ছোট্ট হৃদয়ে আর কত কষ্ট ধারণ করা যায়? এই ছোট্ট মনে আর কত ব্যথা পুষে বেঁচে থাকা যায়? 


তাই আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম। আম্মা আর লতার যত্ন নিয়েন আপনি ছাড়া ওদেরকে কে দেখবে। যদি চাকুরি পাই তবে টাকা নিয়ে ফিরে আসবো আর না পেলে ফিরবোনা বাড়ি বাবা। এই টাকার দুনিয়াতে রক্তের চেয়ে অনেক দামী টাকা বাবা। ভালো থাকবেন নিজের শরীরের যত্ন নিবেন। 


ইতি 


আপনার বেকার অপয়্যা কুসন্তান।  


আজ কয়েকটা দিন বাড়ি ছেড়ে এসেছি মায়ের কথা, বোনের কথা খুব মনে পড়ছে। খুব মিস করছি তাদের। তবুও চোখেরপানি মুছে একটা চাকুরি খুঁজছি। একটা চাকুরি আমার খুব দরকার এই ঢাকা শহরে টাকায় সব, টাকা ছাড়া মানুষের কোনো দাম নেই।


আজ আকাশটা অন্ধকার আমাবস্যা লেগেছে একটা অন্ধকার গলির মুখে আকাশটা দেখছি আর ভাবছি "আল্লাহ আমাকে কেনো পাঠিয়েছেন দুনিয়াতে?  অভাব বেকারত্ব মানুষের কথা শোনার জন্য?" ভাবতে ভাবতেই অন্ধকার নেমে এলো চারপাশে…………


 বেকার চিঠি


Md. Bisshas Prodhan

Hello! My name is Md. Bisshas Prodhan. I am a student and sometimes I was writing blog. My site newsroms24.blogspot.com . If you want a professional content writer please contact me.

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

ad