ফাইভ জি কি? ফাইভ জি এর ব্যাবহার কিভাবে করব
5G মোবাইল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ
১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে বাংলাদেশ ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এল। রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর টেলিটক এর সুবাদে দেশে প্রথম ৫জি এর যাত্রা যা উদ্বোধন করে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার। আর সার্বিক সহায়তা দিয়েছে চীনের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়াই বাংলাদেশ। বিজয়ের মাস, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরাট অর্জন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ছয়-সাতটি দেশ এ প্রযুক্তির আওতায় এসেছে।
ফাইভ জি আসলে কি?
মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ জি; যেখানে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউন লোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক।
এটা আসলে রেডিও তরঙ্গের আরো বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে। শুরু করার আগে জেনে নিন।
সকল জেনারেশনের স্পীড লিমিট
• 3G এর স্পীড ২০০ কিলোবাইট থেকে ১ বা
২মেগাবিট পর্যন্ত হতে পারে।
• 4G এর স্পীড ১০০০ মেগাবিট পর্যন্ত হতে পারে।
• 5G এর স্পীড ১০০০০ মেগাবিট থেকে ১.৯ গিগাবিট পর্যন্ত হতে পারে।
ফাইভ জি কিভাবে কাজ করবে?
নতুন কিছু প্রযুক্তি হয়তো প্রয়োগ আসতে যাচ্ছে, কিন্তু ফাইভ জি প্রটোকলের মান এখনো নির্ধারিত হয়নি। ৩.৫ গিগাহার্জের থেকে ২৬ গিগাহার্জের মতো হওয়ায় ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কারণে তাদের আওতা থাকে কম। ফলে সামনে কোন বাধা পেয়ে সেগুলো সহজেই আটকে যায়। কিন্তু অন্যদিকে ফাইভ জি হয়তো এর থেকেই অধিক শক্তিশালী যে কারণে এটি কোথাও না আটকিয়ে সরাসরি ডিভাইসে ব্যাবহার করা যায়।
তবে এটি সত্য যে দ্রুত গতির বিষয়টি নির্ভর করবে যে, কোন স্পেকট্রাম ব্যান্ডে ফাইভ জি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো মাস্ট এবং ট্রান্সমিটারের পেছনে কতটা বিনিয়োগ করছেন।
ফাইভ জি ফোর জি থেকে কত গুণ শক্তিশালী:
ফোরজি সাধারণত ৩২ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে যদিও এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে এটি ১ গিগাহার্টজ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, ফাইভ জি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম বলছে, ফাইভ জি ফোর জি থেকে ১০ থেকে ২০গুণ গতি দিতে পারে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি ভালো মানের চলচ্চিত্র হয়তো মাত্র এক মিনিটেই ডাউন লোড করা যাবে।
ফাইভ জি ব্যাবহার করতে কি কি প্রয়োজন:
খুব কম দেশে খুব অল্প সংখ্যক ব্যবহারকারী পাওয়া যাবে যারা 5G ব্যবহার করছে। তবে আপনি চাইলেই 5G ব্যবহার করতে পারবেন না।
প্রথমে আপনার 5G enabled mobile phone লাগবে।
বাজারে এখন প্রচুর ফাইভ জি মোবাইল রয়েছে যার মধ্যে ভালো ব্র্যান্ডের একটি ফোন হলেই হবে।
এছাড়া 5G নেটওয়ার্ক তো লাগবেই।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে সম্প্রীতি বাংলা দেশে সরকারি টেলিকম অপারেটর টেলিটক এর হাত ধরেই দেশে প্রথমবারের মতো ৫জি উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার। তাই বাংলাদেশে একমাত্র টেলিটক সিমে ৫জি ব্যাবহার করতে পারবেন।
৫জি নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা:
যেহেতু বাংলাদেশে এখনো ভালো ৫জি সেবা প্রদান করতে পারছে না টেলিটক সিম কোম্পানি তাই আমরা এর সুবিধা সমূহ উপলব্ধি করতে পারছি না তবে ৫জি এর সম্ভাব্য সুবিধা সমূহ হবে_
5G ব্যবহারের সুবিধা:
• মনে করুন, আপনি একটি ২ ঘন্টার মুভি ডাউনলোড দিতে চান, 3G-তে Download হতে ১ ঘন্টা সময় লাগলে, 4G-তে সেই Movie Download হতে সাধারণত ৬ থেকে ৭ মিনিট লাগবে এবং সেই মুভি 5G-তে ৬ থেকে ৭ সেকেন্ডে Download করা যাবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন 5G-এর স্পীড কতোটা বেশি!!
•এই স্পীড যে শুধু মুভি ডাউনলোড করার কাজে লাগবে তা নয়। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তারা যে নিরাপত্তার স্বার্থে ড্রোন ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫জি নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যদিও বাংলাদেশে এখনো উন্নতমানের টেকনোলজির খামতি রয়েছে তারপরও আমরা আশা করতে পারি ভবিষ্যতে ৫জির আদলে আমরাও আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিত করবো।
•কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে বিপুল পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশে এখনো উন্নতমানের টেকনোলজির খামতি থাকায় ৪জি ব্যাবহারের সমস্যা হয়। তবে বাজারে 5g আশায় সেই সমস্যার সমাধান হবে। আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই খারাপ ছিলো কিন্তু বর্তমানে তার অনেকটুকু সমাধান হয়েছে।
•ডাটা কমিউনিকেশন এ দ্রুত উন্নতি। কিছুদিন আগেও ৩জি আদলে একটি ১জিবি ডাটা স্থানান্তর করতে অনেক সময় লাগতো কিন্তু ৪জি আসতে তা দ্রুত হচ্ছে আর যদি 5g দিয়ে স্থানান্তর করা হয় তাহলে কত দ্রুত হবে ভেবে দেখুন।
•দেশকে উন্নতি সাধন করতে setelite এর বিকল্প নেই। Setelite এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই সহজ করেছে। ৫জি বাজারে আসলে setelite এর যোগাযোগ ব্যাবস্থা আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়।
•ঝর বৃষ্টিতে এর সেবার উপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। নিরবিচ্ছন্নভাবে সেবার মান যথাযথ থাকবে।
•একটি ২থেকে ৩ ঘণ্টার মুভি আপলোড হতে মাত্র ১থেকে ২ মিনিট সময় লাগবে ।
5G ব্যবহারের অসুবিধা:
৫জি যে শুধু সুবিধা প্রদান করবে তা না এর বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এর প্রধান সমস্যা রেডিয়েশন। আমরা সবাই জানি ৫জি এর জন্য উচ্চ তরঙ্গ ব্যবহার করতে হবে এতে আশেপাশে রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়বে। যার কারণে মানুষ সহ পশুপাখির মারাত্মক ক্ষতি হবে এর একটি বড়ধরনের প্রভাব পাখিদের উপরে পড়বে।এছাড়াও আরো অনেক অসুবিধা রয়েছে_
•সবথেকে প্রথম সমস্যা এর মূল্য। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ আর আদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় খুব বেশি না হওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার মান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ফাইভ জি এর অধিক দামের জন্য দেশের বেশিরভাগ মানুষ তা অর্থের অভাবে ব্যাবহার করতে পারবেন না।
• 5G সরাসরি ব্যবহার করলে বেশি স্পীড পাওয়া যাবে তবে Tower থেকে আমাদের ফোনে সিগন্যাল আসার মাঝপথে অনেক টায় কম শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রদান করবে।
• Mobile-এর চার্জ তুলনামূলক দ্রুত শেষ হয়। উচ্চ তরঙ্গ ব্যবহার করার ফলে মোবাইল এর চার্জ দ্রুত শেষ হয়।
•পাখিদের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সেই সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে চিনে প্রথম যখন ৫জি প্রস্তুত করা হয় তখন বিপুল পরিমাণ পাখি মারা যায় শুধু উচ্চ তরঙ্গ ব্যবহার করার ফলে।
ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক -কতটা পরিবর্তন আনবে ভবিষ্যতে?
পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট হলো ৫জি আর সভাবতই ৫জি অবশ্যই শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্ক।
১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে বাংলাদেশ ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এল। বিজয়ের মাস, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরাট অর্জন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ছয়-সাতটি দেশ এ প্রযুক্তির আওতায় এসেছে।
ফাইভ–জি সহজলভ্যতার কারণে প্রচলিত অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রম আরও দক্ষ ও গতিশীল হবে, ফলে কাস্টমার সার্ভিস হয়ে উঠবে আরও সন্তোষজনক। এককথায় বলা যায়, গোটা সমাজটাকেই পরিবর্তন করে দেবে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, হাই রেজল্যুশন ভিডিও দেখা, চালকবিহীন গাড়ি, প্লেন চালানোর ট্রেনিং থেকে শুরু করে নানা গবেষণা কর্ম, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধারকাজে ড্রোন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। গুগল ম্যাপ ব্যবহারেও অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। লোকেশন ট্র্যাকিং করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে না, মিলি সেকেন্ডের মধ্যে ফলাফল দেবে। এমনকি উচ্চ ক্ষমতার এই মুঠোফোন ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোবট, সেন্সর বা অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যেও ব্যবহৃত হবে।
এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক -কতটা পরিবর্তন আনবে ভবিষ্যতে। এক কথায় ভবিষ্যতকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে ৫জি ব্যাবহারের বিকল্প নেই।
আর এত সুবিধা নিয়ে ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম ফাইভ জি চালু করে।